রহস্য


রহস্য।

-------------------------------------------------------------

সৃষ্ট সকল বস্তুর আসল সুরত গোলাকৃতির,*

সেই বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুটিই হয় অভীষ্ট মকসুদ।*

প্রভুর পবিত্র একক সত্তা মহাপবিত্র।

অবিনশ্বর সেই সত্তা অতুলনীয়, উনার অজুদ (অস্তিত্ব) উনার যাতের (সত্তার) অনুরূপ বাসিতে হাকীকী (প্রকৃত অবিমিশ্র); আর, তা বিন্দুর মতই (বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুর ন্যায়)*; (তন্মধ্যে কোনরূপ ভাগ-বন্টন হয় না। কিন্তু, অসংখ্য বিষয়ের সাথে সম্পর্ক রাখার কারণে তা বিস্তৃত এবং প্রশস্ত বলে মনে হয়।)

*হৃদয় দর্পণে পতিত আলোক ও এর প্রতিফলনে*,

*আয়নাটির পারা রূপে বিরাজমান স্রষ্টার ধ্রুবসত্য তাওহীদ।*

***

'হক সুবহানুহু তা'আলার অস্তিত্ব, যাহা তাঁহার যাতের অনুরূপ বাসিতে হাকীকী (প্রকৃত অবিমিশ্র) এবং বিন্দুর মতো; তন্মধ্যে কোনরূপ ভাগ-বণ্টন হয় না। কিন্তু, অসংখ্য বিষয়ের সহিত সম্পর্ক রাখার কারণে উহা বিস্তৃত এবং প্রশস্ত বলিয়া মনে হয়।'

(মাআরিফে লাদুন্নিয়াঃ হযরত আহমাদ ফারুক সিরহিন্দ মুজাদ্দেদে আলফে সানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, পৃষ্ঠা ১৮)


[আকৃতির বিষয়টি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। যেমন, অনেক দূর থেকে বিশ্বজগতসমূহকে দেখলে বিন্দুর ন্যায় মনে হয় বা, তাত্ত্বিকভাবে অসীম বড় কোন কিছুকে সংকুচিত করে বিন্দু পর্যন্ত পৌঁছা যায়। - থিওরি অব জেনারেল রিলেটিভিটিঃ স্যার অ্যালবার্ট আইনস্টাইন।

যাইহোক, ঐ পবিত্র অসীম শক্তিশালী অদৃশ্য আলোর বিন্দু ছাড়া বাকী সবকিছুকেই- ঘূর্ণন, সংকোচন, প্রসারণসহ বাইরের যাবতীয় বস্তু বা, শক্তিকে কাল্পনিক বলা হয়েছে।

বিন্দু ছাড়া আরো বড় কোনো আকৃতি বা, সমস্ত জগৎসমূহ বা, অসীম স্থান বা, স্থান-কালের উর্ধ্বে হলেও তা দুই বা, ততোধিক বিন্দুর সমষ্টি; যা আসলে 'অপ্রকৃত বস্তুর' সমন্বয়।

আর, বিন্দু ছাড়া দুই বা, ততোধিক বিন্দুর সমষ্টি বা, এরূপ আকৃতির মধ্যে বিভাজন হয়, শরীক বা, অংশ সাব্যস্ত করা যায়; কিন্তু, বিন্দুর মধ্যে কোন শরীক বা, অংশ বা, ভাগ-বন্টণ হয় না; আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার অপরিবর্তনশীল স্থান-কালের উর্ধ্বের সেই বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুর ন্যায় সত্তাও অনুরূপ; উনি ছাড়া বাকী সবকিছুই ধারণা বা, কল্পনা মাত্র; কল্যানার্থে ভুল ধারণা সহযোগে- প্রবেশ, বের হওয়া বা, মিশ্রিত হওয়া ছাড়াই; যেগুলো উনার সত্তার সম্মুখে প্রকৃতপক্ষে অস্তিত্বহীন। উনার পবিত্র যাতের মাঝেই মিশ্রণ বা, পরিবর্তন ছাড়া কল্পনা সংঘটিত হয়। কারণ, সত্তার মাঝেই ক্রিয়া ঘটে-যদিও তিনি তা থেকে পবিত্র। স্থান-কাল অসীমভাবে বিস্তৃত হয় কী করে? উত্তরে বলা যায়ঃ স্থান-কাল কাল্পনিক বিধায়- স্রষ্টার পবিত্র যাতের মাঝেই আছে- প্রকৃত অবিমিশ্রভাবে। সত্তার মাঝেই কল্পনা ক্রিয়া ঘটে- এ বিষয়টার ধারণা এখানে উল্লিখিত হয়েছে, আমাদের সচেতনতা শরীরের কিছু কোষের মধ্যে চলমান রাসায়নিক মিথষ্ক্রিয়া মাত্র- বিজ্ঞানের একথা থেকে এবং স্যার ইলন মাস্কের নিউরালিঙ্ক কর্তৃক মানব মস্তিষ্কে ইন্দ্রিয়সমূহের নিয়ন্ত্রণ কোষস্থানে সংঘটিত পরিবর্তন সংক্রান্ত গবেষণা থেকে; ইউটিউবে এর উপর ভিডিও আছে; সেখান থেকে বিষয়টার ধারণা গৃহীত হয়েছে।

কোন কিছু থেকে আসতে বা, কোন কিছু হতে আরও বিন্দুর প্রয়োজন হবে; যা আদৌ নেই। কারণ, উনি কোন কিছু থেকে আসেননি এবং উনার থেকেও কেউ আসেনি; উনার কোন শরীক নেই ও উনি ছাড়া আর কোন প্রকৃত অস্তিত্ব নেই।

লা-মাকানকে এভাবে ভাবা যেতে পারে, ঐ পয়েন্টই শুধু বিদ্যমান; যদি সঞ্চারণের প্রয়োজন হয়, তবে কাল্পনিক স্পেস-টাইম তৈরি করে এর মাঝে বিচরণ হয়; অর্থাৎ, কল্পনায় বা, স্বপ্নে সফরের মতো।

আর, এই ড্রিম এক্সিস্টেন্সেই।- অ্যাবসোলুটলি আনমিক্সড।]


'লা শারীকা লাহূ'

'উনার কোন শরীক নেই।'

(সূরা আন'আমঃ আয়াত ১৬৩)


আর, 'আল্লাহ্‌ তা'আলা কোন স্থানে ও কালে আবদ্ধ নহেন, কোন দিকে নহেন, তাঁহার তূল্য কোন বস্তু নাই, তাঁহার পিতা, মাতা, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা নাই। তিনি এই সমস্ত কলঙ্কমূলক ছিফাত হইতে পবিত্র।'

(আনিছুত্তালেবীনঃ হযরত মাওলানা ওয়াল হাফিজ মোহাম্মদ আবদুর রহমান হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৬৪)


'খোদা তা'আলার বিশেষ স্থান হইল লা-মাকান।'

(আনিছুত্তালেবীনঃ ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৭৭)


'আহলে সুন্নাহ্‌ ওয়াল্‌ জামা'আতের আলেমগণ কী সুন্দরই না বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা'আলার অজুদ, তাঁর 'যাত' সুব্‌হানুহু ওয়া তাআ'লার উপর অতিরিক্ত। অজুদকে প্রকৃত যাত বলা এবং অজুদের উপর অন্য কোন বিষয় স্থির না করা দৃষ্টির সংকীর্ণতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। শায়েখ আলাউদ্দৌলা বলেছেন, হক জাল্লা শানুহুর দুনিয়া অস্তিত্বের জগতেরও উর্ধ্বে, এই ফকীরকে যখন অস্তিত্বের জগতের উপর নেওয়া হয়, তখন হালের আধিক্যের মধ্যে থাকাবস্থায়ও আমি নিজেকে অনুসরণ জ্ঞানের দ্বারা মুসলিম হিসাবে গণ্য করতে থাকি। মোদ্দা কথা, সম্ভাব্যের ধারণায় যা কিছু আসে, তা সম্ভাবনা ব্যতীত আর কিছুই নয়।

...

বুলন্দ হিম্মতের জন্য এরকমই প্রয়োজন যে, হক তাআ'লার যাতের অন্বেষণকারী শেষ পর্যন্ত কিছুই পাবে না এবং তার কোনো নাম নিশানাও প্রকাশ পাবে না। একটি জামা'আত এমন আছে, যারা এর ভিন্ন অর্থ গ্রহণ করে। তাঁরা হক তাআ'লার যাতকে, স্বীয় অস্তিত্বের অনুরূপ মনে করে এবং তার সাথে সখ্যতা ও একাত্মতা সৃষ্টি করে।'

(মাবদা ওয়া মা'আদঃ মুজাদ্দেদে আলফে সানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি; মিনহা এগারো, পৃষ্ঠা ২৭, ২৮)


হযরত রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, 'আল্লাহ্‌ তা'আলা হযরত আদম (আলাইহিস সালাম)-কে তাঁর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।..'

(সহীহ্‌ বুখারী ও মুসলিম শরীফ)


হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ্‌ তা'আলা বলেন, 'আমি সর্বপ্রথম আমার সত্তার নূর দ্বারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের রূহ্‌ মুবারাক সৃজন করেছি।'

(সির্‌রুল আস্‌রারঃ বড়পীর হযরত আবদুল কাদির জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, পৃষ্ঠা ৪)


'আল্লাহর জন্যেই সর্বোৎকৃষ্ট তুলনা।'

(সূরা নাহলঃ আয়াত ৬০)


আর, উনার তুলনা উনি নিজেই। অন্য কোন কিছুই উনার সাথে তুলনীয় নয়।


'কোন কিছুই উনার সদৃশ নয়।'

 (সূরা শূরাঃ আয়াত ১১)


'আল্লাহ্‌ আসমান ও যমীনের আলো।'

 (সূরা নূর, আয়াত ৩৫)


মি'রাজ শরীফে নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার  সাথে সাক্ষাত হয়েছিল। এ সম্পর্কে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 'আমি নূর দেখেছি।'

অন্যত্র আছে, 'তিনি তো এক বিরাট জ্যোতি বা, আলো; অতএব, আমি তাকে কিভাবে দেখতে পারি?' 

(সহীহ্‌ মুসলিম শরীফ)


নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

'তিনি (আল্লাহ্‌) নূর, আমি কি করে তা দৃষ্টির অধিগম্য করবো।'

(সহীহ্‌ মুসলিম শরীফঃ ৩৪০)


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-


'আমি আমার রবকে শ্মশ্রুহীন যুবকের আকৃতিতে দেখেছি।'


অর্থাৎ, মহান রবের নূর ও তাজাল্লী হৃদয় দর্পনে অবলোকন করেছি। [নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র হৃদয় দর্পণে আল্লাহর নূর প্রতিফলিত হয়েছে।] কারণ, ঐ আকৃতি হল রূহানী দর্পণ, যা জ্যোতি ও জ্যোতি-অবলোকনকারীর মধ্যে একটি মাধ্যম মাত্র। যখন আল্লাহ্ তা'আলা আকৃতি-প্রকৃতি, পানাহার ও অস্তিত্বের বৈশিষ্ট্যাবলী ও প্রভাব থেকে পূতঃপবিত্র। সুতরাং, তাঁর আকৃতি একটি দর্পণ মাত্র। (আর, এ 'দর্পণ' শব্দটিও শুধুমাত্র বুঝানোর জন্য; অন্যথায়, তিনি তা থেকেও অনেক অনেক উর্ধ্বে।) 'দর্পণ' ও 'দর্শক' উভয়টিই মহান আল্লাহর সত্তার সাথে সম্বন্ধহীন।

(সির্‌রুল আসরারঃ পৃষ্ঠা ৬৩)


'ক্বলব্‌ অর্থাৎ, দিল একটি আয়নার ন্যায়; উহাতে তাওহীদের পারা লাগাইলে আল্লাহ্‌ তা'আলার মহব্বত অর্জন ও কুদরাত দর্শন লাভে সক্ষম হইতে পারিবে।'

(আনিছুত্তালেবীনঃ ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২০০)


'হজরত মুজাদ্দিদে আলফে সানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর জযবা ও সুলুক সম্পর্কেঃ 

জানা কর্তব্য যে, ইনায়েতে ইলাহী জাল্লা-সুলতানুহু সর্বপ্রথম আমাকে তাঁহার প্রতি আকর্ষিত করেন, যেমন- মুরাদের মাকামে উপনীত ব্যক্তিদেরকে আকর্ষিত করা হয়। অতঃপর, দ্বিতীয় পর্যায়ে, আমার জন্য এই জযবা, সুলুকের মঞ্জিল অতিক্রমণ সহজ করিয়া দেয়। বস্তুতঃ, প্রথমাবস্থায় আমি হক তা'আলার যাতকে, বস্তুর অনুরূপ প্রাপ্ত হই; যেমন- পরবর্তীকালের সুফিয়ায়ে কেরাম (তওহীদে-ওজুদীর মাকামে উপনীত ব্যক্তিগণ) এরশাদ করিয়াছেন। অতঃপর, আমি হক তা'আলাকে সমস্ত বস্তুর মধ্যে প্রাপ্ত হই, এমতাবস্থায় যে, তিনি উহাদের মধ্যে হলুল বা, প্রবেশ করেন নাই। পরে আমি হক তা'আলাকে মায়ীয়াতে যাতিয়া হিসাবে, সমস্ত বস্তুর সাথে অনুভব করি। অতঃপর, আমি হক তা'আলাকে সমস্ত বস্তুর পরে প্রাপ্ত হই। পরে সব বস্তুর প্রথমে পাই।


অতঃপর, আমি হক তা'আলা সুবহানুহুকে অবলোকন করি, আর সেখানে কোনকিছুই আমার দৃষ্টিগোচর হয় নাই। ইহাই হইল তওহীদে শুহুদীর অর্থ-  যাহাকে ফানা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। বেলায়েতের রাস্তায় ইহাই প্রথম পদক্ষেপের স্থান। আর, ইহাই হইলো কামালাতের সর্বশেষ স্তর, যাহা প্রথমে হাসিল হইয়া থাকে। আর, এই দর্শন, যাহা আলোচিত স্তরসমূহের যে কোন স্তরেই প্রকাশ পাইতে পারে, প্রথমে ইহা বহির্জগতে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে অন্তর্জগতে প্রকাশ পায়।


অতঃপর, আমি বাকার স্তরে উন্নীত হই, যাহা বেলায়েতের রাস্তায় দ্বিতীয় পদক্ষেপস্বরূপ। পরে আমি সমস্ত বস্তুকে দ্বিতীয়বার অবলোকন করি এবং আমি হক তা'আলা সুবহানুহুকে এই সমস্ত বস্তুর অনুরূপ প্রাপ্ত হই; বরং, আমার নিজের মতই পাই। অতঃপর, আমি আল্লাহ্‌ তা'আলাকে সমস্ত বস্তুর মধ্যে দেখি; বরং, স্বয়ং আমার নাফসের মধ্যে অবলোকন করি। পরে বস্তুর সাথে; বরং, আমার নিজের সাথেই দেখি; অতঃপর, বস্তুর প্রথমে; বরং, নিজেরও প্রথমে অবলোকন করি। পরে আমি হক তা'আলাকে বস্তুর পশ্চাতে দেখি; বরং, আমি আমাকে পরে অবলোকন করি। অতঃপর, আমি বস্তুই দেখিতে পাই এবং আল্লাহ্ তা'আলাকে আদৌ দেখিতে পাই নাই। আর, ইহাই ছিল সর্বশেষ পদক্ষেপ, যেখান হইতে প্রথম পদক্ষেপের দিকে প্রত্যাবর্তন করিতে হয়। আর, এই মাকাম হইল মাখলুককে হক সুবহানুহুর দিকে দাওয়াত দেওয়ার এবং আহবান করিবার জন্য পরিপূর্ণ মাকাম। আর, এই মঞ্জিলই পূর্ণরূপে হাসিল হয়। কেননা, পূর্ণ দরজার ফায়দা পৌঁছানো এবং ফায়দা হাসিল করিবার জন্য ইহাই প্রয়োজন। আর, ইহাই আল্লাহর ফযল; তিনি যাহাকে ইচ্ছা- ইহা প্রদান করেন। আর, আল্লাহ্ বড়ই ফযলওয়ালা। আর, আলোচিত সমস্ত অবস্থা এবং লিখিত সমস্ত কামালাত আমার হাসিল হয়। বরং, ইহা ঐ সমস্ত ব্যক্তিরই হাসিল হইয়া থাকে, যাঁহারা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও পরিপূর্ণ মানব হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তোফায়েলের সহিত সম্পৃক্ত। ইয়া আল্লাহ্! আমাদিগকে আপনার অনুসরণের উপর সুদৃঢ় রাখুন এবং আমাদের হাশর, আপনার-ই দলের সাথে করুন। (তাঁহাদের উপর সালাম ও শান্তি বর্ষিত হউক)। ইয়া আল্লাহ্‌! আপনি ঐ বান্দার প্রতি রহম করুন, যে আমার এই দোয়ার প্রতি আমীন বলে। তাঁহাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হউক- যাঁহারা হিদায়েতের অনুসরণ করেন।'

(মাআরিফে লাদুন্নিয়াঃ মারেফত আটত্রিশ, পৃষ্ঠা ৭৮,৭৯)


আর, 'আলো বস্তুকে দৃশ্যমান করে; কিন্তু, এটি নিজে অদৃশ্য। আমরা আলোকে দেখতে পাই না; কিন্তু, আলোকিত বস্তুকে দেখি।'

[আলোঃ উইকিপিডিয়া]


ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ্‌-এর 'আল ফিকহুল আকবারে' আছে, 'ওয়া হুয়া শাইউন।'


'মি'রাজের রাত্রিতে তাঁহার (প্রিয় নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) ইহজগতে আল্লাহ্‌ তা'আলার দর্শন লাভ হয় নাই ; বরং আখেরাত বা, পরজগতে ঘটিয়াছিল। কেননা, উক্ত রজনীতে তিনি স্থান-কালের বৃত্ত হইতে বহির্গত হইয়াছিলেন ও স্থানের সংকীর্ণতা ডিঙ্গাইয়া আজল বা, আদি ও আবাদ বা, অন্তকে একই মুহূর্তে প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। প্রারম্ভ ও শেষ একই বিন্দুতে সন্নিবিষ্ট দর্শন করিয়াছিলেন। যে বেহেশতবাসীগণ বহু সহস্র বৎসর পর বেহেশতে গমন করিবেন, তাঁহাদিগকে তথায় অবলোকন করিয়াছিলেন। আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু)- যিনি ফকীর ছাহাবীগণের পাঁচশত বৎসর পর বেহেশতে গমন করিবেন, তাঁহাকে দেখিলেন যে, উক্ত কাল অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি বেহেশতে প্রবেশ করিলেন। তখন তাঁহাকে উক্ত বিলম্বের কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন। অতএব বুঝা গেল যে, উক্ত স্থানের অর্থাৎ, যে স্থানে গমন করতঃ হজরত নবীয়ে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্‌ তা'আলার দর্শন লাভ করিয়াছিলেন, সে স্থানের দর্শন পরকালের দর্শনের অন্তর্ভুক্ত। অতএব, আলেমগণের ইজমা বা, একতাবদ্ধ মতের বিপরীত হইল না। অর্থাৎ, পরজগত ব্যতীত যে, দর্শন লাভ হয় না, তাহার বিপরীত হইল না। এই দর্শনকে ভাবার্থে বা, বাহ্যিক হিসাবে পার্থিব দর্শন বলা যাইতে পারে। সমূদয় বিষয়ের প্রকৃত তত্ত্ব আল্লাহ্‌ তা'আলাই অবগত।'

(মকতুবাত শরীফঃ মুজাদ্দেদে আলফে সানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি; ১ম খন্ড, ৩য় ভাগ; ২৮৩ মকতুব, ১১৮ পৃষ্ঠা)


আর, মাওলানা মুহাম্মাদ জালালুদ্দিন রুমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি অনুরূপ বলেছেনঃ 'সমগ্র জগৎ একই সত্তা..।'

(তায্‌কেরাতুল আওলিয়াঃ ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৫)


'তাওহিদে অজুদিঃ উহা এক খোদা তা'আলাকেই একমাত্র মাওজুদ (বিদ্যমান) মনে করা এবং সৃষ্ট পদার্থসমূহকে তাহারই জহুর (প্রকাশ) ব্যতীত আর কিছুই না বলিয়া মনে করা।'

(আনিছুত্তালেবীনঃ ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৬৫)


'তৌহীদে-শুহুদী— এক-দর্শন, অর্থাৎ ছালেক বা, তরীকৎ পন্থীর দৃষ্টিতে এক-বস্তু ব্যতীত কিছুই থাকে না।'

(মকতুবাত শরীফঃ ১ম খন্ড, ১ম ভাগ; পৃষ্ঠা ৯০)


প্রিয়নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, 'আমি আল্লাহ্‌ থেকে, আর সকল ঈমানদার আমার থেকে।'

(হক্বী, তাফসীরে হক্বী, ৩/২১৭; সাখাভীঃ মাকাসিদুল হাসানাহ্‌, ১/৫৫ ; সির্‌রুল আস্‌রারঃ পৃষ্ঠা ৫)


'এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই যে, এই সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা হইলেন হক সুবহানাহু। আর, তিনিই উহাকে স্থিতিশীল রাখিয়াছেন। বস্তুতঃ চিরস্থায়ী ব্যাপারের সম্পর্ক হইলো, আখেরাতের অনন্ত শান্তি ও শাস্তির সহিত। যে সম্পর্কে সত্য সংবাদদাতা রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদ দিয়াছেন। জাহেরী আলেমগণ এই সৃষ্টিজগতকে মওজুদে খারেজী (বাহিরে অবস্থিত) হিসাবে জানেন এবং আছারে খারেজী (বাহিরের প্রভাবের ফলশ্রুতি) বলিয়া মনে করেন। আর সুফিগণ আলমকে মাওহুম (কাল্পনিক) হিসাবে মনে করেন এবং ধারণা ও অনুভূতি ব্যতিরেকে ইহাকে জানার কোন পন্থা নাই বলিয়া অনুমান করেন। সে কল্পনা এইরূপ নহে যে, উহা কেবলমাত্র ধারণার দ্বারাই সৃষ্টি হইয়াছে। যাহার ফলে ধারণা শেষ হওয়ার সাথে সাথে উহারও পরিসমাপ্তি ঘটিবে। আসল ব্যাপার আদৌ এইরূপ নয়। বরং, মহান রব্বুল 'আলামীনের সৃষ্টির কারণ খুবই মজবুত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি ধারণার মধ্যে স্থিতিশীলতা পয়দা করিয়াছেন, যাহার ফলে উহা মওজুদের (স্থিতিশীল থাকার) হুকুম এখতিয়ার (গ্রহণ) করিয়াছে। সমস্ত বুজর্গদের অভিমত এই যে, খারিজের (বাহিরের) মধ্যে কেবল হক সুবহানাহু তা'আলা মওজুদ (অবশিষ্ট) আছেন। আর, আলমের স্থিতিশীল হওয়ার ধারণা কেবলমাত্র জ্ঞানের দ্বারাই এবং বাহিরে উহার স্থিতি কল্পনাপ্রসূত বৈ আর কিছুই নয়।

আল্লাহ্‌ রবুল 'আলামীনের বাণী- আল্লাহর জন্য বুলন্দ (সুউচ্চ) মেছাল (সদৃশ, উদাহরণ) আছে। মওজুদে হাকিকী (মহান আল্লাহর প্রকৃত অবস্থান) জাল্লা শানুহু এবং মওহুমে-খারেজীর (কল্পনায় কোন কিছুর অবস্থান সম্পর্কে ধারণা করা) উদাহরণ হইল নকতায়ে জাওওয়ালার (সঞ্চারিত বিন্দুর) ন্যায়। আর, এই বিন্দুটি দ্রুতগতিতে ঘূর্ণনের কারণে যে বৃত্তটির সৃষ্টি হয়, এই কল্পিত বৃত্তটি ধারণার মধ্যে স্থিতি সৃষ্টি করে। অবশ্য প্রকৃতপ্রস্তাবে বৃত্তটির ধারণা কল্পনাপ্রসূত মাত্র। অন্যথায়, কেবল ঐ বিন্দুটিই মওজুদ।


মাশুকের গোপন ভেদ-এমন মেছাল

যেন উহা অন্যকিছু- অপরের হাল।


বস্তুতঃ আলম (সৃষ্টিজগত) হইলো অপ্রকৃত বস্তুর সমন্বয় মাত্র, তন্মধ্যে প্রকৃত স্থিতিশীল বস্তুর কোন সম্পর্ক নাই। আর, উহার সম্পর্ক হইল জাতে মওহুবের (নিছক জাত আল্লাহ্‌ তা'আলা) সহিত। পূর্ণ আরিফ (আল্লাহর পরিচয় লাভকারী) এই মারেফাতই (আল্লাহ্‌ পরিচিতি) পেশ করেন এবং উহাকে পূর্বশর্ত হিসাবে স্থাপন করেন। আর, এই জাতে মওহুবের বেঁ-চুনী হইতে কোন অংশ লাভ হইবে না। যেমন এ সম্পর্কে আলোচনা অন্য মকতুবে করা হইয়াছে। আর, যখন বেঁ-চুনরি সহিত সম্পর্ক স্থাপন করে; জ্ঞান ও দর্শনের বাহিরে যায় এবং বুদ্ধি ও ধারণার বহির্ভূত কাজ করে; তখন শুভবুদ্ধি যতই চেষ্টা করুক না কেন, কিছুই লাভ করিতে সক্ষম হয় না। বরং, যত দ্রুতই সে ধাবিত হইয়া যত দূরেই যাক না কেনো, কোন কিছুরই সে সন্ধান পাইবে না। কেবল পাইবে ছুম্মাল অরা, আল-অরা (পরে আরও পরে)। জওহরীয়াত (দূরে আরও দূরে- অভিষ্ট বস্তু) ও ইমকান (সম্ভাব্য) হওয়া সত্ত্বেও, তন্মধ্যে ঐ হুকুম অবশিষ্ট নাই। উহা নিস্তীর (অস্তিত্বহীনতা, শূন্যতা) হুকুম ব্যতীত অন্য কোন হুকুম কবুল করে না।'

(মুকাশিফাতে আয়নিয়াঃ মুজাদ্দেদে আলফে সানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মুকাশিফা - উনত্রিশ, পৃষ্ঠা ৬৩, ৬৪)


'বস্তুতঃ ঐ সমস্ত দৃশ্যমান বস্তু, যাহার আকৃতি প্রকাশ্যে অস্তিত্ববান আছে, ইহা কেবলমাত্র একটি ধারণা বৈ কিছুই নয় এবং উহা একটি ভুল ধারণা। যেমন, কাশফের অধিকারী ব্যক্তিদের দর্শন ক্ষমতা সাক্ষ্য প্রদান করে।'

(মাআরিফে লাদুন্নিয়াঃ পৃষ্ঠা ১৪)


'ঐ যাত অতি পবিত্র, যিনি স্বীয় যাত, সিফাত এবং আসমার দ্বারা সৃষ্টিজগতের নশ্বরতা সত্ত্বেও কোনরূপ পরিবর্তনকে কবুল করেন না।'

(মাআরিফে লাদুন্নিয়াঃ পৃষ্ঠা ১৯)


'বলুন! (হাবীব, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি আল্লাহ্‌ এক। আল্লাহ্‌ অমুখাপেক্ষী। তিনি কোন কিছু হতে আসেননি এবং উনার থেকেও কোন কিছু আসেনি। এবং উনার সমতূল্য কিছুই নেই।'

(সূরা ইখলাস)


প্রকৃত সত্য আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ও প্রিয় নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানেন।

Post a Comment

0 Comments